Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)-এ আয়োজিত “Food Based Dietary Guidelines” শীর্ষক সেমিনার সংক্রান্ত প্রতিবেদন।


প্রকাশন তারিখ : 2021-02-10

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)-এ আয়োজিত

“Food Based Dietary Guidelines”

শীর্ষক সেমিনার সংক্রান্ত প্রতিবেদন

 

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। বারটান দেশে খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন তথা প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে কৃষি সেক্টরে খাদ্য ভিত্তিক পুষ্টি (ফলিত পুষ্টি) কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। খাদ্য ভিত্তিক পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও মাঠ গবেষণার মাধ্যমে লব্ধজ্ঞান কাজে লাগিয়ে স্বল্প মূল্যে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, সুষম খাবার নির্বাচন, বয়স ও রোগভিত্তিক খাদ্য নির্বাচন, বিভিন্ন খাদ্যের পুষ্টিমান বিষয়ে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে পুষ্টি সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রেখে জাতীয় উন্নয়নে বারটান অবদান রাখছে। এরই অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দ তারিখে বারটান-এর প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে “Food Based Dietary Guidelines” শীর্ষক সেমিনার-এর আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বারটান-এর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ হাবিবুর রহমান খান এবং সভাপতিত্ব করেন বারটান-এর পরিচালক (যুগ্মসচিব) কাজী আবুল কালাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম-এর প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ড. কামরুন নাহার। সেমিনারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, দেশীয় এবং অন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, পুষ্টিবিদ, বারটান-এর গবেষণা, পুষ্টি শিক্ষা এবং অন্যান্য শাখার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বারডেম-এর প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ড. কামরুন নাহার-এর উপস্থাপিত প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল “Food Based Dietary Guidelines” এবং প্রবন্ধে আলোচিত উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ নিম্নে আলোকপাত করা হলোঃ

  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ১৯৯২ সালে রোমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলনে অপুষ্টিজনিত সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগের প্রকোপ হ্রাস করার লক্ষে প্রতিটি দেশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক নিজেস্ব খাদ্য নির্দেশিকা তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি ১৯৯৭ এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা প্রকাশ। পরবর্তীতে জাতীয় খাদ্যনীতি ২০০৬ এর ৩য় উদ্দ্যেশের অন্যতম কৌশল ছিল “দৈহিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োজন অনুসারে খাদ্য গ্রহণের মাত্রা নির্ধারণ”। এছাড়া জাতীয় পুষ্টি সেবা (২০১১-২০১৬) কার্যক্রমে জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা প্রণয়েনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। [সূত্র: ইউএসইএড, জানুয়ারি, ২০১৭] ।

 

  • বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু শিশু ও মাতৃ পুষ্টি নিশ্চিতকরণ এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য ও খাদ্যের গুনগতমান সম্পর্কে ধারণা, যা সঠিক খাদ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সাহায্যে করবে। সাধারণ মানুষকে সুস্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর পরামর্শ দেয়ার লক্ষ্যে একটি সময়োপযোগী জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকার গুরুত্ব অপরোসীম।

 

  • এই প্রেক্ষাপটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১১-২০১৩ সালে ন্যাশনাল ফুড পলিসি ক্যাপাসিটি স্টেংদেনিং প্রোগাম (NEPCSP) এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বারডেম হাসপাতালের গবেষক দল Desirable Dietary Pattern for Bangladesh শিরোনামে একটি গবেষণা সম্পন্ন করে, যার ফলাফল হিসেবে Desirable Dietary Pattern for Bangladesh প্রণীত হয়।

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা প্রণয়নে দেশের বর্তমান পুষ্টি পরিস্থিতি, HIES ডাটা অনুসারে বর্তমান পুষ্টি গ্রহণ, খাদ্য বৈচিত্র্য, প্রধান খাদ্য, WHO/FAO পরামর্শ, আঞ্চলিক নির্দেশিকা এবং অংশীজনদের ১০টি সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিবেচনা করা হয়েছে।

 

  • বাংলাদেশে জনপ্রতি দৈনিক গড় গ্রহণকৃত খাদ্যে চাল ৪১৬ গ্রাম, সবজি ১৩১ গ্রাম, আলু ৭০ গ্রাম, মাছ ৫০.৩ গ্রাম, ফল ৪৫ গ্রাম, আটা (গম) ৪০ গ্রাম, মসলা ৪০ গ্রাম, শাক ৩৬ গ্রাম, দুধ ৩২ গ্রাম, লবণ ১৫ গ্রাম, ডাল ১৪.৭ গ্রাম, মুরগীর মাংস ১১.৫ গ্রাম, চিনি জাতীয় ৯ গ্রাম, মাংস ৭.৫ গ্রাম এবং ডিম আছে ৫.৭২ গ্রাম ।
  • বাংলাদেশে খাদ্যঝুড়িতে (Food Basket) প্রায় ৪০০ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য আছে, খাদ্য বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে ১২ টি খাদ্য শ্রেণীতে (শস্য, সাদা মূল ও কন্দ জাতীয়, শাক-সবজি, ফল, মাংস, মাছ, ডাল ও বাদাম, দুধ ও দুধ জাতীয়, তৈল ও চর্বি, মিষ্টি জাতীয় এবং মসলা) ভাগ করা হয়েছে।[সূত্র: FANTA/FAO 2021]

 

  • পাহাড়ী (রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি) জনগোষ্ঠীর খাদ্য বৈচিত্র্য (৮ ধরণের) সমতলের থেকে বেশী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডাইনিঙে ৪.৬ ধরণের এবং বস্তিবাসীদের ক্ষেত্রে মাত্র ৩.৭ ধরণের।

 

  • দেশে আমিষের সিংহভাগ (৪৭%) গ্রহণ করা হয় চাল থেকে। এছাড়া আমিষের মোট চহিদার শতকরা ৫ ভাগ আটা থেকে, শতকরা ৪ ভাগ মুরগরি মাংস থেকে, ডাল ও বিচি জাতীয় খাবার থেকে শতকরা ৩ ভাগ, গরুর মাংস থেকে শতকরা ২ ভাগ, মাছ থেকে শতকরা ২ ভাগ এবং ননী বিহীন দুধ থেকে শতকরা ২ ভাগ মেটানো হয়।

 

  • বর্তমানে বাংলাদেশের পুষ্টি অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। দেশে কম ওজনের শিশু জন্মের হার ২২.৬%, ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কৃশতা ও খর্বতার হার যথাক্রমে ৮% ও ২২%। প্রাক-স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার হার ৩৩% এবং জিঙ্কের অভাবে ভুগছে ৪৫%। আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা কারণও পর্যালোচনা করা হয় এবং এর ফলাফল হিসাবে উল্লেখ করা হয় যে, এর ফলে কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়, অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি চলে আসে, বেশিক্ষণ খেলাধূলা করতে ভালো লাগে না, পড়ালেখায় মন বসে না, দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। আয়রণের পরিমাণ কিশোরীদের ক্ষেত্রে তুলনামুলকভাবে বেশী প্রয়োজন হয়। তবে শরীরে আয়রণের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সাইট্টাস জাতীয় ফল, যেমন লেবুর সাথে আয়রণ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। [সূত্র:১,২,৩-BDHS 2017,৩,৪-NMSS 2011-12]

 

  • জিঙ্ক কিশোর কিশোরীদের মস্তিষ্কের উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা পালন করে। শরীরে যদি আয়রণ সঠিকভাবে শোষণ না হয় জিঙ্ক উপাদান কাজ করতে পারবে না। এছাড়া আয়োডিন যাতে সকল লবণে বিদ্যামান ও সঠিক পরিমাণে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

  • উপস্থাপিত প্রবন্ধে ওজন হ্রাসের কৌশল হিসেবে সুষম খাবার গ্রহণ, প্রতিদিন ক্যালরি গ্রহণের হার, সময়মত খাবার গ্রহণ, নিয়মিত স্বল্প পরিমাণ খাবার গ্রহণ, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার বর্জন, আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং প্রচুর পরিমাণে পানীয় পানের পরামর্শ প্রদান করা হয়। এছাড়া চিনি/মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা, স্বাদযুক্ত খাবার পরিহার, ফাস্ট ফুড বর্জন এবং বেশি পরিমাণ খাবার গ্রহণ না করার জন্যও পরামর্শ প্রদান করা হয়।

 

  • বিশ্বব্যাপী পুষ্টি উপাদান গ্রহনের লক্ষমাত্রা উপস্থাপন করা হয়। [সূত্র: FAO/WHO-2013]

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকাতে বাংলাদেশের জনগণের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ১০টি নির্দেশিকাবলী  বিজ্ঞানভিত্তিক ও সহজবোধ্য ভাবে উপস্থাপন করা হয় যা প্রয়োগে খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের অপচয় রোধ হবে এবং সুস্বাস্থ্য বজায়ে থাকবে।

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকার শুরুতে দৈনিক শক্তি চাহিদার ৫৫-৭৫% শর্করা তথা শস্য জাতীয় বিষেশত গোটা শস্য থেকে গ্রহণের কথা বলা হয়। শর্করা গ্রহনের ক্ষেত্রে শাররিক পরিশ্রমের মাত্রা, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, আঁশের উপস্থিতি বিবেচনা করতে বলা হয়। উল্লেখ্য প্রতি ১০০০ কিলোক্যালরি খাদ্যে ১৮ গ্রাম আঁশ থাকতে হবে। শর্করা খাদ্যের ক্ষেত্রে ৫০% শস্য এবং ২০% অশস্য খাদ্য থেকে আসতে হবে। অধিক পুষ্টিমানের জন্য ভাত বা রুটির সাথে ডাল/ডিম/শীম/মাছ/মুরগীর মাংস গ্রহন এবং বাত রান্নার সময় মাড় ফেলে না দেওয়ার (বসা ভাত) নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 

  • প্রতিদিনের প্রোটিন গ্রহণ নির্দেশিকায় ১-৪ পিস মাছ/মাংস/মুরগীর মাংস বা ১-২ কাপ ডাল গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক যাদের প্রতিদিনের খাবারে মাংস, ঘি ও মাখন থাকবে না তারা প্রতিদিন ১টি ডিম খেতে পারবেন।  প্রোটিনমান বাড়ানোর জন্য খাবারে শস্য ও ডালের অনুপাত ৩:১ হওয়ার পাশাপাশি বাদাম জাতীয় তৈলাক্ত মাছ (ইলিশ, পাঙাস, তেলাপিয়া ইত্যাদি) গ্রহণের উপর জোর দেওয়া হয়।

 

  • প্রতিদিনের ভিটামিন ও মিনারেল এবং খাদ্য আঁশের চাহিদা পূরণে দৈনিক ১০০ গ্রাম ফল যার মধ্যে একটি সাইট্রাস জাতীয় এবং অপরটি ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ হতে হবে। পাশাপাশি ২০০ গ্রাম সবজি এবং ১০০ গ্রাম পাতা জাতীয় সবজি তথা শাক গ্রহণ করতে হবে।

 

  • মজবুত হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর উৎস হিসাবে দৈনিক ন্যূনতম ১৩০ মিলি দুধ বা সমমানের দই বা দুধ জাতীয় খাবার গ্রহনের উপর জোর দেওয়া হয়। ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্সের ক্ষেত্রে এবং উপকারী অনুজীবের উৎস হিসেবে দই গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা-২ এ দৈনিক পরিমিত পরিমাণ (৩০ গ্রাম) তৈল বা ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণের পাশাপাশি  অতিরিক্ত তৈল বা চর্বি জাতীয় খাবার এবং ট্রান্সফ্যাট (<১%) বর্জন করতে বলা হয়। এ সময় ট্রান্সফ্যাট নিয়ে বিস্তারিত অলোচনা করা হয়।   

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকার তৃতীয় ধাপে দৈনিক ৫ গ্রামের কম কিন্তু আয়োডিন যুক্ত খাবার লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার এবং টেস্টিং সল্ট পরিহার করতে বলা হয়।

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকার চতুর্থ ধাপে রিফাইন্ড সুগার (পরিশুদ্ধ চিনি/সাদা চিনি) কে খাদ্য বিপর্যয় বলে অবহিত করার পাশাপাশি চিনিযুক্ত অধিক মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিমিত পরিমাণ গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিদিন মৌসুমী ফল গ্রহণের মাধ্যমে চিনির চাহিদা পুরণে গুরুত্বারোপ করা হয়।

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকার পঞ্চম ধাপে দৈনিক ১.৫-৩.৫ লিটার (৬-১৪ গ্লাস) বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শের পাশাপাশি  ষষ্ঠ ধাপে নিরাপদ,পরিস্কার, ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ভেজাল মুক্ত খাদ্য গ্রহণের উপর জোর দেওয়া হয়।এসময় ঢাকা সিটিতে বিভিন্ন মাছে প্রাপ্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি এবং এর বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়।

 

  • নির্দেশিকার অষ্টম ধাপে সঠিক পদ্ধতিতে রান্না, খাদ্যাভাস এবং সুস্থ জীবন-যাপনে নিজেকে অভ্যস্ত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে শরীরের তামাপাত্রা যাচাই, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত পানি পান, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই ব্যবহার এবং করোনাকালে মাস্ক ব্যবহার, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং জনাকীর্ণ স্থান পরিহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 

  • নবম নির্দেশনায় গর্ভকালীন এবং স্তন্যদানকালীন স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি খাদ্য গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কৈশরকালীন গর্ভধারণ পরিহার এবং গর্ভকালীন সময়ে কোলিন যুক্ত খাবার গ্রহণের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

 

  • খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকার দশম ধাপে শিশুকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ এবং ৬ মাস পর সম্পূরক খাবার দেওয়ার কথা বলা হয়। শিশুর ২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। এ সময় শিশু জন্মের পরপর প্রসূতি মাকে ডি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 

 

আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর উপস্থিত কর্মকর্তাগণ উপস্থাপকদের নিকট প্রশ্ন করেন। বারটান-এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মোঃ মাকসুদুল হক জানান বাজারে প্রাপ্ত চালের ২৫% এর অধিক পোলিশ করা যা কোন ক্রমইে ৭% এর বেশি হওয়া উচতি নয়। ফলে চাল থেকে আমরা শুধু মাত্র শর্করা ছাড়া অন্যান্য অনুপুষ্টি থেকে বঞ্চিত হই। শিশুর বয়স ৬ মাসের পর গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে কী না প্রশ্নের উত্তরে বারডেমের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ড. কামরুন নাহার পানি ও দুধ ৩:১ অনুপাতে শিশুকে খাওয়ানোর পরার্মশ দেন। এ সময় বারটান-এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা রহমান ভুঞা জানান ৬ মাস পর শিশুর খাদ্যের ৪০% মায়রে দুধ থেকে এবং ৬০% অন্যান্য সম্পূরক খাবার থেকে আসতে হবে। বারটানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ ছগির আহাম্মদের প্রশ্ন “ছাগলের দুধে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক উপাদান থাকা সত্ত্বেও তা বাচ্চাদের খাওয়ানো হয় না কেন” এর উত্তরে ড. কামরুন নাহার ছাগলের দুধের অপর্যাপ্ত প্রাপ্যতাকে দায়ী করেন। সয়া নাগেট প্রতদিনি খাওয়া যাবে কিনা প্রশ্নের উত্তরে ড. নাহার বলেন যে, উচ্চ প্রোটিন থাকা সত্ত্বেও সয়া নাগেট দৈনিক গ্রহণ না করে সপ্তাহে ১ বা ২  দিন গ্রহণ করা যেতে পারে যেহেতু সয়া নাগেটে উপস্থিত Isoflavones কিছু ক্ষেত্রে মানব শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আলোচনা কালে ফ্রিজের রাখা একই খাবার বার বার গরম করে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর বলে মত প্রকাশ করা হয় এবং রান্নার সমস্যা নিরসনে ড.নাহার কয়েকজন মিলে রান্না করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।  ড.কামরুন নাহার আলোচনা কালে রোগ প্রতিরোধের জন্য ডিম, তৈলাক্ত মাছ এবং সূর্যের আলো শরীরে লাগানোর উপর গুরুত্ব আরোপ  করেন।  এ সময় তিনি বলেন যে ২-১৪ বছর বয়সী যে সকল শিশু নিয়মিত রৌদ্রের আলোতে খেলাধূলা করে তারা অন্যদের চেয়ে ২" বেশী লম্বা হয়।

 

 

প্রধান অতিথি ও সভাপতি

সেমিনারে প্রধান অতিথি, বারটানের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান খান, প্রধান অতিথির বক্তবে উল্লেখ করেন যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সরকার পুষ্টি বিষয়ে অধিক গুরুত্বারোপ করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, পুষ্টি নিয়ে সরকারের ২২টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে এবং জাতীয় পুষ্ট পরিকল্পনা-২ (NPAN-2) গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন খাদ্য পথ্য হিসেবে কাজ করে। সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হয়। তাই শিশুকাল থেকে সঠিক খাদ্যাভাসের মাধ্যমে মস্তিকের উন্নত গঠন, ইমিউনিটি ও সু-স্বাস্থের উন্নতি ঘটাতে হবে। সেজন্য সহজ ভাষায় গাইড লাইন প্রণয়ন করতে হবে। সরকার সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নগদ সহায়তা, চাল, আটা এবং কম দামে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে থাকে। এমন একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে যাতে সহজেই সকলে কোন খাদ্য কী পরিমাণে গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষুধা নিবৃত্তি করতে পারে তা বুঝতে পারে। তিনি রোগ প্রতিকারের চেয়ে সঠিক খাদ্যাভাসের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে অধিক গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন এক্ষেত্রে বারটানের কাজই বেশী। বর্তমান সরকার বারটানের উন্নয়নে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার প্রধান কার্যালয়সহ ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করেছেন। তিনি প্রবন্ধে উল্লিখিত নির্দেশিকা কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। সভাপতির বক্তব্যে বারটান-এর পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জনাব কাজী আবুল কালাম বলেন সেমিনারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিলো যা বারটান-এর কর্মকর্তাদের জন্য শিক্ষণীয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে তা বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। তিনি বারটান-এর কর্মকর্তাদের ১০টি খাদ্য নির্দেশিকা বিশেষ করে খাদ্য ঝুড়িতে (Food basket) যেসব খাদ্য আছে সেসবের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী (গার্মেন্টস কর্মী, বস্তিবাসী, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি) তাদের সীমিত আয়ের দিয়ে যাতে পুষ্টিকর খাবার নির্বাচনের মাধ্যমে খাদ্য নির্দেশিকা মেনে চলতে পারে সেজন্য কাজ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন শহরের মানুষের পক্ষে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব না হলেও মফস্বল ও গ্রামের মানুষের পক্ষে তা সম্ভব, তাই তাদেরকে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তিনি ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, প্রত্যাহিক ব্যায়াম সহ সেমিনার থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। খাদ্যকে পথ্যে হিসেবে পরিণত করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

 

সেমিনার থেকে নিম্নোক্ত পরামর্শসমূহ পাওয়া যায় :

  • বারটান-এর কর্মকর্তাদের জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা বিশদভাবে জেনে তা বিজ্ঞান সম্মতভাবে জনসাধারণের মাঝে উপস্থাপন করতে হবে।
  • শহরের মানুষের পাশাপাশি মফস্বল ও গ্রামের মানুষ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুসারে সচেতন করতে হবে।
  • স্কুল শিক্ষকদের জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পুষ্টিকর খাদ্যাভাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
  • বারটান তার নিজস্ব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ ধরণের সেমিনার বেশি করে আয়োজনের ব্যবস্থা করবে।
  • নবনিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পুষ্টি বিষয়ক গবেষণা ও সচেতনা বৃদ্ধি কর্মকাণ্ডে নিবিড়ভাবে  আত্মনিয়োগ করতে হবে।